Tuesday 17 January 2017

নেতিধোপানি বেড়াতে পর্যটকরা কেন এতো উৎসাহী ? (বেহুলা-লখিন্দরের প্রায় ৪০০ বছর আগের কাহিনী)

নেতিধোপানি বেড়াতে পর্যটকরা কেন এতো উৎসাহী ? (বেহুলা-লখিন্দরের প্রায় ৪০০ বছর আগের কাহিনী)



ঐতিহাসিক ঘটনা অনুসারে, চাঁদ সওদাগর নামে এক ব্যবসায়ী শিবের উপাসক ছিলেনসাপের দেবী হিসাবে পরিচিত পদ্মাবতী (মনসা)তিনি শিবের মানস কন্যাঝগড়ার সময় বোন চন্ডীকা বেলকাঁটা দিয়ে তাঁর বাম চোখ অন্ধ করে দিয়েছিলমহেশ্বরের পরামর্শে মনসা সিঁজুয়া পর্বতে বাস করতোজরতকর মুনির পত্নিঋষি আস্তিকের মামর্ত্যে ভক্তদের পুজো পেতে চাঁদ সওদাগরের কাছ থেকে পুজো পাওয়া একান্ত জরুরী ছিল


মতলা নদীতেমৃত স্বামীকে নিয়ে ভাসছেন বেহুলা
 বণিক পুজো করতে রাজি না হওয়ায় মনসার চক্রান্তে শ্রীলঙ্কায় বাণিজ্যে যাওয়ার পথে কালীদহের সাগরে আচমকা ঝড় ওঠেতাঁর সপ্তডিঙা বজরা ডুবে যায়মারা যায় ৬ পুত্রপুড়ে যায় বসতবাটিওহতাশ হয়ে পাগল বেশে পথে পথে ঘোরার ৬ মাস পর বণিক চম্পকনগরে নিজের গ্রামে ফিরে আসেন (বাংলাদেশের বগুড়া জেলায়)এই প্রতিশোধের পথ ছেড়ে সহৃদয় হতে পিতা শিব মনসাকে পরামর্শ দেনমনসার আশীর্বাদে জন্ম হয় চাঁদের সপ্তম পুত্র লখিন্দরের। (লক্ষ্মীপুজোর দিন জন্মতাই লখিন্দর/ লখাই)জ্যোতিষীর পরামর্শে বণিক-স্ত্রী সনকার অনুরোধে উজাননগরের নিশানিপুরের ব্যবসায়ী সাই সওদাগরের কন্যা বেহুলার সঙ্গে বিয়ে হয় লখিন্দরেরতাতেও মন গলেনি চাঁদেররুষ্ট মনসা প্রতিশোধ নিতে বিয়ের প্রথমরাতে ময়ূর, নেউলে ভরা সাঁতাল বনে বিশ্বকর্মার তৈরি লোহার বাসর ঘরে কালনাগিনী সাপ পাঠিয়ে দংশন করিয়ে লখিন্দরের মৃত্যু ঘটায়। 


নদীতে ভাসছে মৃত লখিন্দর
ওই রাতে জগৎ গৌরীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে স্বামীর জীবন ফেরাতে বেহুলা চুয়া-চন্দন মাখানো স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে একটি কলার ভেলায় ছ’মাস ধরে ভাস ছিলেনস্বর্গে যাওয়ার পথে বাগমারা জঙ্গলে পৌঁছায়সেখানেই দেখা হয় দেবতাদের ধোপানি এবং মনসার সখী নেতার সঙ্গে। 

স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে মাজগ নদীতে ভাসছন বেহুলা
মাতলা নদীর ঘাটে কাপড় ধুচ্ছিলতাঁর কোলের শিশু বিরক্ত করছিলতিনি নদীর জল ছিটিয়ে তাকে নির্জীব করে রেখেছিলেনপরে আবার একই ভাবে সজীব করে তুলেছিলেনঘটনাটি দেখে নিজের স্বামীর কঙ্কাল-সার দেহে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ জানায়নেতা-ই বেহুলাকে স্বর্গে ইন্দ্রসভায় নিয়ে যায়নৃত্যের মাধ্যমে দেবতাদের খুশি করে শর্তসাপেক্ষে শিবের নির্দেশে মনসা লখিন্দরের মৃতদেহে প্রাণ ফিরিয়ে দেয়গ্রামে ফিরে বেহুলার একান্ত কাতর অনুরোধে চাঁদ বাম হাতে পুজো দেয় মনসাকেসেই থেকে মর্তে দেবী পুজোর প্রচলন ঘটেসুন্দরবনবাসী সাপের ভয়ে আজও মনসাকে ভক্তিভরে দুধ-কলার নৈবেদ্য সাজিয়ে ঘটা করে পুজো করেকেউ মূর্তি, কেউ প্রতীক পুজো করেপুজোর দিন বাড়ি বাড়ি অরন্ধন পালিত হয়


1 comment: