জঙ্গল-নদী সংলগ্ন বদ্বীপ অঞ্চলের বিক্ষিপ্ত এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠেছে। মোট জন সংখ্যার ৯৫ শতাংশ কৃষিজীবী। যখন কাজ থাকে না সেই সময় বনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। মাছ, কাঁকড়া ধরতে কখনও প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে কখনও বা সপরিবারে বনে চলে যাচ্ছেন। সামান্য অসতর্ক হলেই বাঘ, কুমিরের কবলে পড়ে প্রাণ হারান। এখানকার জমির বেশিরভাগ অংশ লবণাক্ত। সাধারণ মাত্রা (১.৪-২.৯ এম এম হস/সিএম)। আয়লার পর (২৫ মে, ২০০৯) এই মাত্রা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। হয়েছে (৮.৩ এম এম হস/সিএম)। গ্রীষ্মে নোনার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। কৃষি বা মাছ চাষ করে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না সুন্দরবনবাসী। ইতিমধ্যে অনেক পরিবার সুন্দরবন ছেড়ে শহরমুখী হয়েছেন বরাবরের জন্য। বহু গরিব যুবক জীবিকার তাগিদে পরিবার নিয়ে ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন। আজও সুন্দরবন ছেড়ে যাচ্ছেন অনেকে।
এলাকায় কৃষি-শিল্প গড়ে উঠেনি। পর্যটন ব্যবসাও সাফল্য পায়নি। দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে শিশু, নারী পাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যাঁরা রয়ে যাচ্ছেন বেঁচে থাকতে তাঁরা মাছ-চিংড়ি-কাঁকড়া ধরতে জঙ্গলে চলে যাচ্ছেন। বেঘোরে প্রাণ দিচ্ছেন বাঘের মুখে গিয়ে। এক দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন নদী এলাকায় বসবাসকারী মানুষজন। গ্রাম গুলির পুনর্গঠনের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উদ্যোগী হলেও সুন্দরবনবাসীর দুঃখ ঘোচেনি। সরকারি হিসাবে ৯২৭ জন মৎস্যজীবী বৈধ সরকারি কাগজপত্র নিয়ে বনে যান। কিন্তু গরিবির সংখ্যা দিনদিন বেড়ে চলায় নদী সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী গ্রামবাসীরা সরকারি নির্দেশকে উপেক্ষা করে অবৈধ ভাবে বনে চলে যাচ্ছেন। বন্যপ্রাণীর হাতে জখম হওয়ার বা প্রাণ হারানো পরও একই ভাবে জঙ্গলে যাচ্ছেন। মরাবাঁচার প্রশ্নে তাঁরা কোনও ভাবে পিছু হটছেন না।
No comments:
Post a Comment