আয়তনঃ ১৮০০ শতকের দিকে অবিভক্ত সুন্দরবনের আয়তন ছিল ১৬,৭০০ বর্গ কিমি। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০,৮১৩ বর্গ কিমিতে। ১৯৪৭ সালে ভারত এবং বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণের পর মোট আয়তনের ৬২ শতাংশ চলে যায় বাংলাদেশের অংশে (চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও সাতক্ষীরা) এবং বাকি ৩৮ শতাংশ যুক্ত হয় ভারতের সঙ্গে (নামখানা ও বসিরহাট রেঞ্জ)। তৎকালীন সময় ভারতের প্রথম বনকর্তা নিযুক্ত হয়ে ছিলেন শ্রীধর চক্রবর্তী (১৮৯৬)। বর্তমানে ভারতীয় সুন্দরবনে বন রয়েছে ৪,৭২৬ বর্গকিমি। এরমধ্যে ৫৫ শতাংশ বন। বাকি এলাকায় মানুষের বাস।
অভয়ারণ্যঃ বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য গঠিত হয়েছে চারটি অভয়ারণ্য। এগুলি- সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান, সজনেখালি অভয়ারণ্য, লোথিয়ান দ্বীপ এবং হ্যালিডে দ্বীপ অভয়ারণ্য।
প্রশাসনিক কাজঃ বন পরিচালনার জন্য ব্যাঘ্র প্রকল্প এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১৮০০ শতকে রাঁচি, সিংভূম, মানভূম, পালামৌ, ছাপরা, হাজারিবাগ থেকে মুন্ডাদের শ্রমিকের কাজ এবং জঙ্গল হাসিল করাতে সুন্দরবনে এনে ক্রীতদাস করে রাখা হতো। তৎকালীণ মগ জলদস্যুদের অনেকেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিল। সুন্দরবন ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় বেশকিছু মগ-পরিবার সাগরদ্বীপ ও ক্যানিং, মগরাহাট, জয়নগর-সহ আশপাশ এলাকায় আত্মগোপণ করে ছিল। আজও রয়ে গিয়েছে। পৌন্ড্র জাতিই ছিল মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। ৪ মে (২১ বৈশাখ) বুদ্ধ পূর্ণিমা বা (বৈশাখী পূর্ণিমা) তিথিতে আজও দিনটি শ্রদ্ধা ও পবিত্রতার সঙ্গে সুন্দরবনে
পালিত হয়।
মোট দ্বীপঃ ১০২ টি। ৫৪ টি দ্বীপে (১৯ টি ব্লকে) ৩৭ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩৫৬ জন মানুষের বাস। {২০১১ কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষার সমীক্ষা অনুসারে}। (বর্তমানে ৫০ লক্ষেরও বেশি)। সবচেয়ে বেশি বাস সাগর দ্বীপে। ৯ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১,৩৩,৩৬৫ জন। ৪৮টি দ্বীপ নিয়ে ম্যানগ্রোভ বন ও বন্যপ্রাণী।
সবচেয়ে বেশী দ্বীপ রয়েছে-
পাথরপ্রতিমা ব্লকে। ১৩ টি,
গোসাবায় ৯ টি,
নামখানায় ৫ টি,
সন্দেশখালিতে রয়েছে ৬ টি এবং
হাড়োয়া ব্লকে ৫ টি।
জন্মের হারঃ ১০০০ পুরুষ প্রতি ৯৩৩ জন কন্যা সন্তান জন্মাচ্ছে। (২০০১ সমীক্ষা আনুসারে)।
সুন্দরবন নতুন জেলাঃ সুন্দরবনকে ভেঙে বসিরহাট এবং সুন্দরবন নামে দুটি পৃথক জেলা করার কথা ঘোষিত হয়েছে (২৭ নভেম্বর ২০১৫)। সুন্দরবন জেলার প্রধান কার্যালয় ক্যানিং।
(উত্তর ২৪ পরগনায় ৬ টি ব্লক)- এগুলি— হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি-১ ও ২, হাড়োয়া, মিনাখাঁ এবং হাসনাবাদ। সবই জনবসতি এলাকা। এখানে কোনও বন নেই।
(দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৩ টি ব্লক)- এগুলি হল ক্যানিং-১ ও ২, বাসন্তী, গোসাবা, জয়নগর-১ ও ২, কুলতলি, মথুরাপুর-১ ও ২, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা এবং সাগরদ্বীপ।
নদীঃ রায়মঙ্গল, আদিগঙ্গা, হরিণভাঙা, গোয়াসাবা, মাতলা, বিদ্যাধরী, ঝিলা, করতাল, ঠাকুরান, সপ্তমুখী, মড়িগঙ্গা, গাবতলা, মৃদঙ্গভাঙা, জগদ্দল, আজমলমারি, ঢুলিভাসানি, চুলকাটি, বেলেডেনা, পেইলি নদী, হেড়োভাঙা, মণি নদী, বেনিফেলী, হুগলী।
গাছগাছালিঃ সাধারণত ২৫ টি ম্যানগ্রোভ গাছ সাধারণত চোখে পড়ে।
বন ও বন্যপ্রাণীঃ বাংলার রাজকীয় বাঘ বিখ্যাত। রয়েছে অসংখ্য সামুদ্রিক মাছ, প্রাণী, স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখি, প্রজাপতি, কীটপতঙ্গ।
No comments:
Post a Comment