Thursday 12 January 2017

একনজরে ভারতীয় সুন্দরবন

আয়তনঃ ১৮০০ শতকের দিকে অবিভক্ত সুন্দরবনের আয়তন ছিল ১৬,৭০০ বর্গ কিমি। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০,৮১৩ বর্গ কিমিতে। ১৯৪৭ সালে ভারত এবং বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণের পর মোট আয়তনের ৬২ শতাংশ চলে যায় বাংলাদেশের অংশে (চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও সাতক্ষীরা) এবং বাকি ৩৮ শতাংশ যুক্ত হয় ভারতের সঙ্গে (নামখানা ও বসিরহাট রেঞ্জ)। তৎকালীন সময় ভারতের প্রথম বনকর্তা নিযুক্ত হয়ে ছিলেন শ্রীধর চক্রবর্তী (১৮৯৬)। বর্তমানে ভারতীয় সুন্দরবনে বন রয়েছে ৪,৭২৬ বর্গকিমি। এরমধ্যে ৫৫ শতাংশ বন বাকি এলাকায় মানুষের বাস



অভয়ারণ্যঃ বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য গঠিত হয়েছে চারটি অভয়ারণ্য। এগুলি- সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান, সজনেখালি অভয়ারণ্য, লোথিয়ান দ্বীপ এবং হ্যালিডে দ্বীপ অভয়ারণ্য।

প্রশাসনিক কাজঃ বন পরিচালনার জন্য ব্যাঘ্র প্রকল্প এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগে ভাগ করা হয়েছে।


জনবসতিঃ প্রাক-মোগল আমল থেকে সুন্দরবনে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মানুষের বাস। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বারবার মগ ও পর্তুগীজদের হামলায় ধ্বংস হয়েছিল এই বনাঞ্চল। ইংরাজ আগমণের পর আবার নতুন করে জনবসতি গড়ে উঠেছিল। বাখরগঞ্জ, খুলনা ও দুই ২৪ পরগণার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন অংশে পাওয়া ধ্বংসাবশেষ থেকে তার বহু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ অব্দের কাছাকাছি বহু জনগোষ্ঠীর আগমণ ঘটে ছিল সুন্দরবনে। খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতক থেকে বৌদ্ধধর্মের মূল বিস্তার ঘটেছিল। সেন আমল থেকেই এই জাতির একটি গোষ্ঠীর প্রবল চাপে জন্ম হয়েছিল বিভিন্ন জাতির। বর্তমানে এখানে পৌণ্ড্র, ক্ষত্রিয়, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, মুন্ডা, সাঁওতাল, ওঁরাও, দাস, দেবদাসী জাতি মানুষের বাস।

১৮০০ শতকে রাঁচি, সিংভূম, মানভূম, পালামৌ, ছাপরা, হাজারিবাগ থেকে মুন্ডাদের শ্রমিকের কাজ এবং জঙ্গল হাসিল করাতে সুন্দরবনে এনে ক্রীতদাস করে রাখা হতো। তৎকালীণ মগ জলদস্যুদের অনেকেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিল। সুন্দরবন ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় বেশকিছু মগ-পরিবার সাগরদ্বীপ ও ক্যানিং, মগরাহাট, জয়নগর-সহ আশপাশ এলাকায় আত্মগোপণ করে ছিল। আজও রয়ে গিয়েছে। পৌন্ড্র জাতিই ছিল মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। ৪ মে (২১ বৈশাখ) বুদ্ধ পূর্ণিমা বা (বৈশাখী পূর্ণিমা) তিথিতে আজও দিনটি শ্রদ্ধা ও পবিত্রতার সঙ্গে সুন্দরবনে
পালিত হয়।


মোট দ্বীপঃ ১০২ টি। ৫৪ টি দ্বীপে (১৯ টি ব্লকে) ৩৭ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩৫৬ জন মানুষের বাস। {২০১১ কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষার সমীক্ষা অনুসারে}। (বর্তমানে ৫০ লক্ষেরও বেশি)। সবচেয়ে বেশি বাস সাগর দ্বীপে। ৯ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১,৩৩,৩৬৫ জন। ৪৮টি দ্বীপ নিয়ে ম্যানগ্রোভ বন ও বন্যপ্রাণী।


সবচেয়ে বেশী দ্বীপ রয়েছে-
পাথরপ্রতিমা ব্লকে। ১৩ টি,
গোসাবায় ৯ টি,
নামখানায় ৫ টি,
সন্দেশখালিতে রয়েছে ৬ টি এবং
হাড়োয়া ব্লকে ৫ টি। 


জন্মের হারঃ ১০০০ পুরুষ প্রতি ৯৩৩ জন কন্যা সন্তান জন্মাচ্ছে। (২০০১ সমীক্ষা আনুসারে)


জাতিঃ তফশিলি জাতি ৬৫%, উপজাতি ৩৮%। (পৌন্ড্র, ক্ষত্রিয়, দেবদাসী, দাস, মুন্ডা, ওঁরাও)


জীবিকাঃ কৃষি-মাছ চাষবনের মধু, নদী থেকে  মাছ, কাঁকড়া শিকার। (বিদেশে রপ্তানী হয়)। 



জেলা ভাগঃ এপর্যন্ত ২৪ পরগনা ৩ বার ভাগাভাগি হয়েছিল১৮১৪, ১৮৩৪ ও ১৯৮৬ (১ মার্চ)



সুন্দরবন নতুন জেলাঃ  সুন্দরবনকে ভেঙে বসিরহাট এবং সুন্দরবন নামে দুটি পৃথক জেলা করার কথা ঘোষিত হয়েছে (২৭ নভেম্বর ২০১৫)।  সুন্দরবন জেলার প্রধান কার্যালয় ক্যানিং। 



ব্লক গুলিঃ ১৯ টি  ব্লক  নিয়ে গঠিত সুন্দরবনবেশীরভাগ বন



(উত্তর ২৪ পরগনায় ৬  টি ব্লক)- এগুলি— হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি-১ ও ২, হাড়োয়া, মিনাখাঁ এবং হাসনাবাদসবই  জনবসতি এলাকাএখানে কোনও বন নেই



(দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৩ টি ব্লক)- এগুলি হল ক্যানিং-১ ও ২, বাসন্তী, গোসাবা, জয়নগর-১ ও ২, কুলতলি, মথুরাপুর-১ ও ২, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা এবং সাগরদ্বীপ



নদীঃ রায়মঙ্গল, আদিগঙ্গা, হরিণভাঙা, গোয়াসাবা, মাতলা, বিদ্যাধরী, ঝিলা, করতাল, ঠাকুরান, সপ্তমুখী, মড়িগঙ্গা, গাবতলা, মৃদঙ্গভাঙা, জগদ্দল, আজমলমারি, ঢুলিভাসানি, চুলকাটি, বেলেডেনা, পেইলি নদী, হেড়োভাঙা, মণি নদী, বেনিফেলী, হুগলী



গাছগাছালিঃ সাধারণত ২৫ টি ম্যানগ্রোভ গাছ সাধারণত চোখে পড়ে
বন ও বন্যপ্রাণীঃ বাংলার রাজকীয় বাঘ বিখ্যাতরয়েছে অসংখ্য সামুদ্রিক মাছ, প্রাণী, স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখি, প্রজাপতি, কীটপতঙ্গ




No comments:

Post a Comment