দেবতাদের তুষ্ট করতে সুন্দরবনের অ-বিবাহিতা, যুবতী, বালিকা এবং বৃদ্ধারা বিভিন্ন সময় কোনও না কোনও ব্রত পালন করে থাকেন। সধবা-বিধবারাও গৃহশান্তি, পরিবার, সন্তান-সন্ততিদের মঙ্গলকামনা, ঐশ্বর্যকামনা, স্বর্গকামনায় নিজেদের মতো করে বেশ কিছু ব্রত প্রচলন করেছেন।
এর বাহ্যিক কোনও আড়ম্বর নেই। কিন্তু নিষ্ঠা-সহ পালন করেন। বেশিরভাগ ব্রত দেবতার প্রতীকের সামনে উদযাপিত হয়। মহিলারাই সাধারণত এই রীতি পালন করেন। পুরুষরা নয়।
————————————————————————————————————————————————————
দশ পুত্তল ব্রতঃ ৭/৮ বছর বয়সের বালিকারা দশটি দেব-দেবীর কাছে জীবনের প্রথম বর প্রার্থনা করে। চৈত্রসংক্রান্তির দিন এবং বৈশাখ মাসের প্রথম দিন থেকে প্রতিদিন তুলসীমঞ্চের সামনে কাঠি দিয়ে আঁচড় কেটে শিব-দুর্গা-কার্তিক-গনেশ-সহ দশটি দেবদেবীর প্রতিমূর্তি এঁকে পুজো করে।
তোষলা ব্রতঃ বিয়ের পর স্বামীর গৃহে গিয়ে রান্নাঘরে যাতে তুষ এবং ঘুঁটের ধোঁয়ায় কষ্ট পেতে না হয় তাই বালিকারা ছোটবেলা থেকেই অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তির দিন মাটির সরায় গোবরের ২১ টি গুলি বানিয়ে তাতে সিঁদূরের ফোঁটা
দিয়ে সরার উপর বেগুন পাতায় রেখে পুজো করে।
দিয়ে সরার উপর বেগুন পাতায় রেখে পুজো করে।
পূণ্যিপুকুর ব্রতঃ সৌভাগ্য সঞ্চয়ের আশায় বিবাহিত-অবিবাহিতরাই চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন এবং বৈশাখ মাসের প্রতিদিন পুজো করেন। নিয়ম — মহিলারা চারকোণা ছোট্ট পুকুর খনন করে তাতে বেলের ডাল পুঁতে চারপাশে কড়ি ও হলুদ রাখে। বিভিন্ন রঙের ফুল, কাঁটা দিয়ে গেঁথে পুজো করে।
যমপুকুর ব্রতঃ কিশোরী-যুবতী-সধবা-বিধবা সকলেই এই ব্রত পালন করেন। পূণ্যিপুকুর ব্রতর মতোই পুজো করে। এখানে কচুগাছ, কলমীলতা, ধান গাছ ওই ছোট্ট পুকুরে পুঁততে হয়। ধান গাছে সিঁদূরের ফোঁটা দিয়ে ফুলের মালা পরানো হয়। আশ্বিন মাসের সংক্রান্তির দিন থেকে কার্তিকসংক্রান্তি পর্যন্ত প্রতিদিন কাক ডাকার আগে ভোরে যমপুজো সেরে নিতে হয়। সংক্রান্তি শেষ হলে লতাপাতা বিসর্জন দিতে হয়। মকর পাতানোঃ পৌষ সংক্রান্তির আগের দিন কুমারীরা নদীতে স্নান করে ঘাটে আমৃত্যু (বন্ধুত্ব) পাতায়।
শিব ব্রতঃ ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ লাভের আশায় অনেক বালিকা একত্রিত হয়ে এই ব্রত পালন করে। আকন্দ ফুল, বেল ও আতপচালের নৈবেদ্য দিয়ে পুজো করে। একটি বেদী বানিয়ে তার উপর তালপাতার ছাতা গেঁথে দেয়। এছাড়াও শিবরাত্রির আগের নিরামিষ আহার করার পরের দিন উপবাস থেকে শিবপুজো করা হয়। মেয়েরা বেলপাতা, ফুল, কলা, দই, ঘি, মধুর নৈবেদ্য সাজিয়ে কঠোর সংযমে গঙ্গার মাটি দিয়ে চারটি শিবলিঙ্গ গড়ে রাত্রিতে চার প্রহরে চারবার পুজো করে। পরের দিন মহিলারা শিবের ব্রতকথা শোনেন। পৃথিবী ব্রতঃ পার্থিব-সুখ-সৌভাগ্য লাভের আশায় কুমারী, অ-কুমারী, যুবতী, বালিকারা এই ব্রত পালন করেন। মাটির উপর পদ্মফুল এঁকে পদ্মপাতা পেতে একটি শঙ্খ রাখা হয়। বামহাতে অন্য একটি শঙ্খ বাজানো হয়। চৈত্রসংক্রান্তি থেকে বৈশাখ সংক্রান্তি পর্যন্ত প্রতিদিন স্নানের পর পুজো হয়।
ঢেলাফেলাঃ মনসার বিশেষ আরাধনা।{শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষে শনি/মঙ্গলবার} রান্নাকরা খাবার সাজিয়ে পুজো করা হয়। সাতদিন আগে কচুপাতায় ১৪ রকম সবজি বেঁধে মনসার থানে রেখে দেওয়া হয়। ঢেলেফেলার দিন খাওয়া হয়। (আগের দিন রান্না হয় না। ওই দিন গ্রামে অরন্ধন পালিত হয়)।
দুর্গাফোঁটাঃ দুর্গাপুজোর সময় মহা সপ্তমীর ঊষালগ্নে মহিলারা সূচিবস্ত্রে প্রতি ঘরের দরজায় সিঁদূরের ফোঁটা দিয়ে থাকেন। বুনো আগাছার ফল দিয়ে ফোঁটা দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য- পরিবারের কল্যাণ।
No comments:
Post a Comment