নেতিধোপানি বেড়াতে পর্যটকরা কেন এতো উৎসাহী ? (বেহুলা-লখিন্দরের প্রায় ৪০০ বছর আগের কাহিনী)
ঐতিহাসিক ঘটনা অনুসারে, চাঁদ সওদাগর নামে এক ব্যবসায়ী শিবের উপাসক ছিলেন। সাপের দেবী হিসাবে পরিচিত পদ্মাবতী (মনসা)। তিনি শিবের মানস কন্যা। ঝগড়ার সময় বোন চন্ডীকা বেলকাঁটা দিয়ে তাঁর বাম চোখ অন্ধ করে দিয়েছিল। মহেশ্বরের পরামর্শে মনসা সিঁজুয়া পর্বতে বাস করতো। জরতকর মুনির পত্নি। ঋষি আস্তিকের মা। মর্ত্যে ভক্তদের পুজো পেতে চাঁদ সওদাগরের কাছ থেকে পুজো পাওয়া একান্ত জরুরী ছিল।
|
মতলা নদীতেমৃত স্বামীকে নিয়ে ভাসছেন বেহুলা |
বণিক পুজো করতে রাজি না হওয়ায় মনসার চক্রান্তে শ্রীলঙ্কায় বাণিজ্যে যাওয়ার পথে কালীদহের সাগরে আচমকা ঝড় ওঠে। তাঁর সপ্তডিঙা বজরা ডুবে যায়। মারা যায় ৬ পুত্র। পুড়ে যায় বসতবাটিও। হতাশ হয়ে পাগল বেশে পথে পথে ঘোরার ৬ মাস পর বণিক চম্পকনগরে নিজের গ্রামে ফিরে আসেন (বাংলাদেশের বগুড়া জেলায়)। এই প্রতিশোধের পথ ছেড়ে সহৃদয় হতে পিতা শিব মনসাকে পরামর্শ দেন। মনসার আশীর্বাদে জন্ম হয় চাঁদের সপ্তম পুত্র লখিন্দরের। (লক্ষ্মীপুজোর দিন জন্ম। তাই লখিন্দর/ লখাই)। জ্যোতিষীর পরামর্শে বণিক-স্ত্রী সনকার অনুরোধে উজাননগরের নিশানিপুরের ব্যবসায়ী সাই সওদাগরের কন্যা বেহুলার সঙ্গে বিয়ে হয় লখিন্দরের। তাতেও মন গলেনি চাঁদের। রুষ্ট মনসা প্রতিশোধ নিতে বিয়ের প্রথমরাতে ময়ূর, নেউলে ভরা সাঁতাল বনে বিশ্বকর্মার তৈরি লোহার বাসর ঘরে কালনাগিনী সাপ পাঠিয়ে দংশন করিয়ে লখিন্দরের মৃত্যু ঘটায়।
|
নদীতে ভাসছে মৃত লখিন্দর |
ওই রাতে জগৎ গৌরীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে স্বামীর জীবন ফেরাতে বেহুলা চুয়া-চন্দন মাখানো স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে একটি কলার ভেলায় ছ’মাস ধরে ভাস ছিলেন। স্বর্গে যাওয়ার পথে বাগমারা জঙ্গলে পৌঁছায়। সেখানেই দেখা হয় দেবতাদের ধোপানি এবং মনসার সখী নেতার সঙ্গে।
|
স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে মাজগ নদীতে ভাসছন বেহুলা |
মাতলা নদীর ঘাটে কাপড় ধুচ্ছিল। তাঁর কোলের শিশু বিরক্ত করছিল। তিনি নদীর জল ছিটিয়ে তাকে নির্জীব করে রেখেছিলেন। পরে আবার একই ভাবে সজীব করে তুলেছিলেন। ঘটনাটি দেখে নিজের স্বামীর কঙ্কাল-সার দেহে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ জানায়। নেতা-ই বেহুলাকে স্বর্গে ইন্দ্রসভায় নিয়ে যায়। নৃত্যের মাধ্যমে দেবতাদের খুশি করে শর্তসাপেক্ষে শিবের নির্দেশে মনসা লখিন্দরের মৃতদেহে প্রাণ ফিরিয়ে দেয়। গ্রামে ফিরে বেহুলার একান্ত কাতর অনুরোধে চাঁদ বাম হাতে পুজো দেয় মনসাকে। সেই থেকে মর্তে দেবী পুজোর প্রচলন ঘটে। সুন্দরবনবাসী সাপের ভয়ে আজও মনসাকে ভক্তিভরে দুধ-কলার নৈবেদ্য সাজিয়ে ঘটা করে পুজো করে। কেউ মূর্তি, কেউ প্রতীক পুজো করে। পুজোর দিন বাড়ি বাড়ি অরন্ধন পালিত হয়।
Maa monosa nahi No hater hater bhochor purano
ReplyDelete