মধ্যযুগের মতো আজও সুন্দরবনের মানুষ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। লৌকিক দেবদেবী, বিবি, গাজী, পীর-পিরানীদের পুজো, হাজোতের রেওয়াজ রয়ে গিয়েছে। প্রাচীণকালে ইরান দেশ থেকে বহু পীর-ফকির সুন্দরবনে এসেছিলেন। তাঁদের অনেকেই দেবতা হিসাবে পূজিত হচ্ছেন। বাঘ, কুমির, সাপের ভয়ে আলাদা আলাদা দ্বীপে লোক দেবতার পুজো হয়।
এঁরা হলেন —
বনবিবি {বনের দেবী}: বনের মুসলিম দেবী (১৮০০)। সব ধর্মে পূজিতা হন। বনে যাওয়ার আগে নিরাপদে ফিরতে মানত করে হাতে লাল সুতোর দিয়ে মাদুলি, তাবিজ বাঁধেন জেলে, মৌলে, গ্রামবাসীরা। নিজেরাই দিন ঠিক করে নির্দিষ্ট দিনে গ্রামে পুজো করেন।
পুজোর জন্য গাছেরতলায় খোলা আকাশের নিচে বসিয়ে রাখা হয়েছে দেবতাদের। |
বনের এই দেবীর বীরত্বের কাহিনীকে নিয়ে লেখা ‘দুখেযাত্রা’ পরিবেশিত হয় গ্রামে।
বনে প্রবেশের আগেও কাদামাটির মূর্তি গড়ে দেবীকে পুজো করা হয়। গ্রামে না ফেরা পর্যন্ত বাড়ি-বাড়ি ‘অশৌচ’ পালিত হয়। মহল (মধু সংগ্রহ) শেষে নিরাপদে গ্রামে ফিরে আসার পর ব্যাপক আয়োজন করে গুড়ের বাতাসা দিয়ে দেবীকে ভক্তিভরে পুজো-বন্দনা করা হয়।
পৌষসংক্রান্তিতে (১৪ জানুয়ারি) দেবীর মূর্তির পুজো হয়। গ্রামে সারা বছর মূর্তি, প্রতীক, ঘট পুজো চলে।
দক্ষিণরায়{বারাঠাকুর} (বাঘ, মোম-মধু্ বাস্তু দেবতা): মধ্যযুগে আবির্ভূত। বনদেবতা হিসাবে পুজো পেলেও ইনি আদতে রাজা প্রতাপাদিত্যের সেনানায়ক। মদন রায়ের বংশধর। দন্ডক্ষের পুত্র।
মা রায়মণি। তিনি ছিলেন তান্ত্রিক ও ইনি বনের কাঠ, মোম, মধুর অধিকারী। বন্দুকধারী যোদ্ধার পোষাক পরা এই বীর নিজেকে বাঘের নিয়ন্ত্রক বলে দাবি করেন। কথিত আছে- এক সময় মৌলেরা বনে মধুর খোঁজ না পেয়ে হতাশ।
দক্ষিণরায়ের স্বপ্নাদেশে ধনা মৌলে গ্রাম থেকে ‘দুখে’ নামেএক বিধবার সন্তানকে ফুসলিয়ে বনে নিয়ে যায়। মধু পাওয়ারলোভে তাকে বনে ছেড়ে পালিয়ে আসে। বাঘের রূপ ধরে দক্ষিণরায়। তাকে খেতে গেলে শিশুর কাতর আর্তনাদে বনবিবি’র আবির্ভাব হয়।
তাঁর নির্দেশে তাঁরই ভাই শাহজঙ্গলী বাঁচায়। দক্ষিণরায় কোথাও কোথাও বাঘের দেবতা হিসাবেও পুজিত হন।
বারুইপুরের ধপধপিতে স্থায়ী পাকা মন্দির আছে শ্বেত পাথরের মূর্তি। বনের মধ্যে মাটির মূর্তি নিয়ে গিয়ে মানত চুকোতে বিক্ষিপ্ত ভাবে পুজো হয় এই বাঘ দেবতার।
দক্ষিণরায় |
দক্ষিণরায় |
দক্ষিণরায়ের বারামূর্তি (বাস্তু ঠাকুর) |
দক্ষিণরায়ের স্বপ্নাদেশে ধনা মৌলে গ্রাম থেকে ‘দুখে’ নামেএক বিধবার সন্তানকে ফুসলিয়ে বনে নিয়ে যায়। মধু পাওয়ারলোভে তাকে বনে ছেড়ে পালিয়ে আসে। বাঘের রূপ ধরে দক্ষিণরায়। তাকে খেতে গেলে শিশুর কাতর আর্তনাদে বনবিবি’র আবির্ভাব হয়।
বারুইপুরের ধপধপিতে দক্ষিণরায়ের মন্দির। |
তাঁর নির্দেশে তাঁরই ভাই শাহজঙ্গলী বাঁচায়। দক্ষিণরায় কোথাও কোথাও বাঘের দেবতা হিসাবেও পুজিত হন।
বারুইপুরের ধপধপিতে স্থায়ী পাকা মন্দির আছে শ্বেত পাথরের মূর্তি। বনের মধ্যে মাটির মূর্তি নিয়ে গিয়ে মানত চুকোতে বিক্ষিপ্ত ভাবে পুজো হয় এই বাঘ দেবতার।
ছবিগুলো তো চুরি করা , আমাদের ছুটি গ্রুপ থেকে।
ReplyDelete