Saturday 14 January 2017

জলদস্যু হামলা, নারী পাচার

{পর্তুগীজরা বাণিজ্য করতে সুন্দরবনে এসেছিল (১৬২৮-১৬৩৩)সফল না হওয়ায় পরে তারা মানুষ কেনাবেচার ব্যবসায় শুরু করেপরবর্তীতে মহারাষ্ট্রের মগ (বর্গী) নামে একটি জনগোষ্ঠী তাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে এই অমানবিক ব্যবসায় নেমেছিল (১৭১৮-১৮০০)১৭৪২ সাল নাগাদ অমানুষিক নির্যাতন করেছে।}


 প্রকাশ্যে মানুষ কনাবেচাঃ চট্টগ্রাম, ঢাকা, ভোলা, হাতিয়া, মনপুরা, ২৪-পরগনা ছিল তাদের অবাধ লীলাভূমিদস্যুরা সমুদ্র ও নদীপথে এসে গ্রামে এবং হাটে-বাজারে, উৎসব-পার্বণে হানা দিতনারী-পুরুষদের ধরে ক্রীতদাস করে রাখতোচলতো লুটপাট, অত্যাচার, গণধর্ষণবাসন্তীর বিরিঞ্চিবাড়ি, ক্যানিং, দাঁড়িয়া, হুগলী, কলকাতা, বজবজ, আখড়া, মেদিনীপুরের হিজলী, ওড়িষ্যার পিপিলি বন্দর, মুম্বই এবং চেন্নাইয়ের বিভিন্ন বন্দরেও ক্রীতদাস বিক্রির ‘দাস বাজার’ গড়ে উঠেছিলক্রেতারা ছিল ইংরাজ, ফরাসি এবং ওলন্দাজ বণিকেরাবিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ-কিশোরী, হিন্দু-মুসলিমদের বন্দি করতোতাদের গলায় শিকল বেঁধে, হাতের তালু ছিদ্র করে সরু বেতের দড়ি প্রবেশ করিয়ে একজনের উপর অন্যজনকে চাপিয়ে জাহাজের পাটাতনের নিচে ফেলে রাখতোপ্রতিদিন সন্ধ্যায় পাখির দানার মতো খাবার ছড়িয়ে দিত তারাআসহায় ক্রীতদাসদের গলায় দড়ি পরিয়ে গরু-ছাগলের মতো হাটে-বাজারে, বন্দরে বিক্রি করতো তারাশারীরিক শক্তির তারতম্য অনুসারে ২০-৭০ টাকা পর্যন্ত দর উঠতোকিশোরী, অবিবাহিত, সুন্দরী যুবতীদের দাম উঠতো আরও বেশীবর্তমানে সুন্দরবনে বসবাসকারী খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বেশীরভাগই পর্তুগীজ ধর্মযাজকদের চাপে ধর্মান্তরিত হয়েছেন

মগ-ফিরিঙ্গীদের যৌন-সম্পর্কজাতদের অনেকেই দক্ষিণ ২৪-পরগনার ক্যানিং, গোসাবা, কুলপি, গঙ্গাসাগর, ঢাকার ফিরিঙ্গিবাজার, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, নোয়াখালি, হাতিয়া এলাকায় আজও রয়ে গিয়েছেনমগ-ফিরিঙ্গীদের হাত থেকে কোনও ভাবে পালিয়ে বাঁচা মহিলারা মগ-স্পর্শদোষে কলঙ্কিত বলে সমাজচ্যুত করতো রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণ সমাজ (১৭০০)বাংলাদেশের যশোর, নদিয়া, হুগলী, ২৪-পরগনা এবং সুন্দরবনাশ্রিত বহু পরিবারের পূর্বপুরুষদের স্ত্রী-কন্যারা সেই সমাজে আর ঠাঁই পাননিআজও দুষ্টচক্র সুন্দরবনের নারীদের নানা প্রলোভনে ভিনরাজ্যে পাচার করছে

সুন্দরবন থেকে নারী পাচার অব্যাহতঃ দিল্লি, মুম্বই, পুনের পতিতালয়ে গোপণে কেনাবেচা চলছেজাহাঙ্গীরের আমলে শাহজাহান (১৬৬৬), ঔরঙ্গজেবের সময় সুবেদার শায়েস্তা খাঁ (১৭০০) এই অত্যাচার বন্ধের চেষ্টা করেছিলেনচেষ্টা সফল হয়নিইংরাজ বণিকরা সুন্দরবন দখল করলেও বর্গী হাঙ্গামার ভয়ে তটস্থ ছিলপরে বর্গীদের সঙ্গে নবাবরা সমঝোতা করে ছিল (১৯৬৫)দস্যুরা পরে জমিদারদের অধীনে সৈনিক বৃত্তি আরম্ভ করেছিলদস্যুদের কিছু শিষ্য আজও সুন্দরবনে রয়ে গিয়েছেসুযোগ বুঝে মাঝেমধ্যে মৎস্যজীবীদের উপর হামলা চালাচ্ছেঅপহরণ করছেমোটা টাকার মুক্তিপণ দাবি করছে।  দিতে না পারলে মাঝ দরিয়ায় খুন করেও দিচ্ছে।  ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় জলদস্যুবৃত্তি বেড়ে গিয়েছিল


নিরাপত্তাঃ এদের প্রতিরোধ করতে বন দফতর বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন হলদিবাড়ি, চামটা, বাগমারা জঙ্গলে স্থায়ী এবং বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন সামশেরনগর, হরিণভাঙা, হাভাতে, ম্যালমেলিয়া,কাকমারি, তেঁতুলতলা, ভাঙনঘাটা’তে ভাসমান ক্যাম্প বসিয়েছেরাজ্য পুলিশ পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুর, কাকদ্বীপের হারউড পয়েন্ট, বকখালির ফ্রেজারগঞ্জ, সাগরের গঙ্গাধরপুর, ডায়মন্ডহারবারের পারুলিয়া, কুলতলির মৈপিঠ, বাসন্তীর ঝড়খালি, গোসাবার ছোটমোল্লাখালি এবং সন্দেশখালির হেমনগরে উপকূলীয় থানা চালু করেছে। (পরিকল্পণা- ক্যানিংয়ের ধর্মতলা, জয়নগরের বকুলতলা, সোনারপুরের কালিকাপুর, বিষ্ণুপুরের জুলপিয়া)সাগরদ্বীপে ‘নৌসেনা ঘাঁটি’ গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে


No comments:

Post a Comment