Monday, 6 February 2017

ঝিঙেখালি পর্যটন কেন্দ্র

ঝিঙেখালি পর্যটন কেন্দ্রঃ এটিও বাংলাদেশের গা ঘেঁষেসুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এলাকার মধ্যেবন দফতরের বসিরহাট রেঞ্জের অধীন এই পর্যটন কেন্দ্রপাশেই উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ কালিতলা গ্রাম পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কুঁড়েখালি নদী

বিট অফিসিকে ঘিরে ঘড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্ররয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার, বনবিবির মন্দির


বিশেষ আকর্ষণঃ এখানে কেওড়া গাছের বনে প্রচুর বাদুড় ঝুলতে দেখা যায়গ্রামে তাড়া খেয়ে এই বনে এসে আশ্রয় নিয়েছে

বাঘের ডেরাঃ এই বন থেকে বাঘ নদী সাঁতরে প্রায় গ্রামে আসেবাঘ দেখার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে


বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগঃ গোসাপ, শুয়োর,

 বাঁদর, 

ফটকা (পায়েড কিংফিসার)
মাছরাঙা,

মরাল (হুইস্টিং টিল)
শঙ্খচিল, বাজপাখি, গেছো বোড়া সাপ দেখতে পাওয়া যায়। 

দৈত্যবক (গোলিয়থ হেরন)
ভোঁদড়ের দল ডুবে ডুবে মাছ ধরে
ভোঁদড়
দপাখিদের প্রজননঃ জুন-জুলাই মাসে পাখিরা প্রজননের জন্য হেঁতাল বনে বাসা বাঁধেচোরাশিকার বন্ধ করতে বন দফতর বিশেষ প্রহরা বসায়
সুন্দরবনে চলছে মধু সংগ্রহ 
মধুও সংগ্রহঃ প্রতি বছর এপ্রিল মাসে মধু সংগ্রহ হয়বন দফতরের অনুমতি নিয়ে গ্রামবাসী ও মধু সংগ্রহকারীরা মধু আনতে বনে যানতাদের সঙ্গে থাকলে কাছ থেকে দৃশ্য দেখা যায় 
সুন্দরবনে চলছে মধু সংগ্রহ




 

Sunday, 5 February 2017

বুড়িরডাবরি পর্যটন কেন্দ্র

বুড়িরডাবরিঃ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় বুড়িরডাবরি পর্যটন কেন্দ্রটিএর একদিকে রায়মঙ্গল নদীঅন্যদিকে বিশাল কালিরচর ৩ টি দ্বীপকে ঘিরে এই পর্যটন কেন্দ্র

লাউডগা সাপ (নির্বিষ গেছো সাপ)
গোলপাতা, কেওড়া, হেঁতালের ঘন জঙ্গলসজনেখালি থেকে মেকানাইজড বোট এবং লঞ্চে যাওয়া যায়সাড়ে ৩-৪ ঘন্টার পথনদী-খাঁড়ি পেরিয়ে যেতে হয়জল পথে যেতে দারুন লাগবে। ক
শিকারের অপেক্ষ্য
 বিশেষ আকর্ষণঃ এখানে বাঘ রয়েছেবনের মধ্যে দিয়ে হাঁটার জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়েছেবাঘ যাতে হামলা করতে না পারে সেই কারনে রাস্তাটি নাইলনের এবং লোহার জাল ঘিরে রাখা হয়েছে। 
শিকারের খোঁজে
বাঘ আসলেও খুব কাছ থেকে দেখা যাবেহরিণ, শুয়োর, গোসাপ (মনিটর লিজার্ড)-কে হাতের কাছে পাওয়া যাবে। 
ছবিও তোলা যাবেছবি তোলার আশায় পর্যটকরা বেশি সেখানে যেতে যায়

  
ওয়াচ টাওয়ারঃ রাস্তার পাশে রয়েছে একটি মিষ্টি জলের পুকুরসেখানে বাঘ ছাড়াও অন্যান্য বন্যপ্রাণীরা জল খেতে আসেপর্যটকদের তাদের কাছ থেকে দেখার জন্য ঊঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার বানানো হয়েছেটাওয়ারের উপর থেকে এনেক দূরের জীবজন্তু দেখা যাবেলক্ষ্য করা যাবে বাংলাদেশএখানে ইকো-ট্যুরিজম কমপ্লেক্স রয়েছেনদীতে শুশুক এবং চরে কুমির, বক, পাখি, ভোঁদড়, শুয়োর দেখা যায়বনের টাওয়ারের আশপাশে বাঘ ঘোরাফেরা করে

প্রদেশ পথ
 রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা নেইঃ এই পর্যটন কেন্দ্রে রাত্রিযাপনের কোনও ব্যবস্থা নেইসারাদিন বেড়িয়ে বিকালে ফিরে যেতে হবে গোসাবায়থাকতে হবে সজনেখালি, পাখিরালয়, দয়াপুর, জেমসপুর বা লাহিড়িপুরের কোনও হোটেল, রেস্টুরেন্টেপরের দিন অন্য পর্যটন কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা 


Tuesday, 17 January 2017

নেতিধোপানি বেড়াতে পর্যটকরা কেন এতো উৎসাহী ? (বেহুলা-লখিন্দরের প্রায় ৪০০ বছর আগের কাহিনী)

নেতিধোপানি বেড়াতে পর্যটকরা কেন এতো উৎসাহী ? (বেহুলা-লখিন্দরের প্রায় ৪০০ বছর আগের কাহিনী)



ঐতিহাসিক ঘটনা অনুসারে, চাঁদ সওদাগর নামে এক ব্যবসায়ী শিবের উপাসক ছিলেনসাপের দেবী হিসাবে পরিচিত পদ্মাবতী (মনসা)তিনি শিবের মানস কন্যাঝগড়ার সময় বোন চন্ডীকা বেলকাঁটা দিয়ে তাঁর বাম চোখ অন্ধ করে দিয়েছিলমহেশ্বরের পরামর্শে মনসা সিঁজুয়া পর্বতে বাস করতোজরতকর মুনির পত্নিঋষি আস্তিকের মামর্ত্যে ভক্তদের পুজো পেতে চাঁদ সওদাগরের কাছ থেকে পুজো পাওয়া একান্ত জরুরী ছিল


মতলা নদীতেমৃত স্বামীকে নিয়ে ভাসছেন বেহুলা
 বণিক পুজো করতে রাজি না হওয়ায় মনসার চক্রান্তে শ্রীলঙ্কায় বাণিজ্যে যাওয়ার পথে কালীদহের সাগরে আচমকা ঝড় ওঠেতাঁর সপ্তডিঙা বজরা ডুবে যায়মারা যায় ৬ পুত্রপুড়ে যায় বসতবাটিওহতাশ হয়ে পাগল বেশে পথে পথে ঘোরার ৬ মাস পর বণিক চম্পকনগরে নিজের গ্রামে ফিরে আসেন (বাংলাদেশের বগুড়া জেলায়)এই প্রতিশোধের পথ ছেড়ে সহৃদয় হতে পিতা শিব মনসাকে পরামর্শ দেনমনসার আশীর্বাদে জন্ম হয় চাঁদের সপ্তম পুত্র লখিন্দরের। (লক্ষ্মীপুজোর দিন জন্মতাই লখিন্দর/ লখাই)জ্যোতিষীর পরামর্শে বণিক-স্ত্রী সনকার অনুরোধে উজাননগরের নিশানিপুরের ব্যবসায়ী সাই সওদাগরের কন্যা বেহুলার সঙ্গে বিয়ে হয় লখিন্দরেরতাতেও মন গলেনি চাঁদেররুষ্ট মনসা প্রতিশোধ নিতে বিয়ের প্রথমরাতে ময়ূর, নেউলে ভরা সাঁতাল বনে বিশ্বকর্মার তৈরি লোহার বাসর ঘরে কালনাগিনী সাপ পাঠিয়ে দংশন করিয়ে লখিন্দরের মৃত্যু ঘটায়। 


নদীতে ভাসছে মৃত লখিন্দর
ওই রাতে জগৎ গৌরীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে স্বামীর জীবন ফেরাতে বেহুলা চুয়া-চন্দন মাখানো স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে একটি কলার ভেলায় ছ’মাস ধরে ভাস ছিলেনস্বর্গে যাওয়ার পথে বাগমারা জঙ্গলে পৌঁছায়সেখানেই দেখা হয় দেবতাদের ধোপানি এবং মনসার সখী নেতার সঙ্গে। 

স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে মাজগ নদীতে ভাসছন বেহুলা
মাতলা নদীর ঘাটে কাপড় ধুচ্ছিলতাঁর কোলের শিশু বিরক্ত করছিলতিনি নদীর জল ছিটিয়ে তাকে নির্জীব করে রেখেছিলেনপরে আবার একই ভাবে সজীব করে তুলেছিলেনঘটনাটি দেখে নিজের স্বামীর কঙ্কাল-সার দেহে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ জানায়নেতা-ই বেহুলাকে স্বর্গে ইন্দ্রসভায় নিয়ে যায়নৃত্যের মাধ্যমে দেবতাদের খুশি করে শর্তসাপেক্ষে শিবের নির্দেশে মনসা লখিন্দরের মৃতদেহে প্রাণ ফিরিয়ে দেয়গ্রামে ফিরে বেহুলার একান্ত কাতর অনুরোধে চাঁদ বাম হাতে পুজো দেয় মনসাকেসেই থেকে মর্তে দেবী পুজোর প্রচলন ঘটেসুন্দরবনবাসী সাপের ভয়ে আজও মনসাকে ভক্তিভরে দুধ-কলার নৈবেদ্য সাজিয়ে ঘটা করে পুজো করেকেউ মূর্তি, কেউ প্রতীক পুজো করেপুজোর দিন বাড়ি বাড়ি অরন্ধন পালিত হয়


নেতিধোপানি/নেতাধোপানি ঘাট

নেতিধোপানি মন্দিরের আশপাশে থাকা বাঘ

হিন্দু পদ্মপুরাণে বাংলার মনসা মঙ্গলকাব্যে বেহুলা-লখিন্দরের প্রেম কাহিনীতে নেতাধোপানির ঘাটের কথা  উল্লেখ রয়েছে
নেতিধোপানি ঘাট


ইটের ভগ্নদশা শিব মন্দিরটি আজও দেখা যায়ঐতিহাসিক সেই নেতা-ধোপানির ঘাটটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র

নেতিধোপানি ঘাটের পাশে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ 
নদীতে ভাটার সময় আজও ইটপাতা ঘাটটি দেখা যায়মন্দিরের আশপাশে বাঘ দেখা যায়

মদনটাক পাখি
প্রচুর পাখি, রয়েছে ওই বনেপর্যটকরা দেখতে ভিড় করেনরয়েছে ওয়াচ টাওয়ার

নেতিধোপানির জঙ্গল
এই বনে এক্সযাওয়ার পথে লঞ্চ/ ভুটভুটি থেকে প্রায় বাঘের দেখা মেলেনদীর চরে কুমিরকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়হরিণদের খেলা করার দৃশ্য হামেসাই চোকে পড়ে

 প্রচুর মাছরাঙাপাখি দেখা যায়৩ টি দ্বীপ নিয়ে বাগমারা জঙ্গল৬,৪৪৭.৬৮ হেক্টর বন ঘিরে এই পর্যটন কেন্দ্রসজনেখালি থেকে ৩ ঘন্টা দূরত্বেঅসংখ্য খাঁড়ি, ভারানি খালের হেঁতাল, গরান, গর্জন, ধুঁদুল, পশুর গাছের বন পেরিয়ে যেতে হবেএই পর্যটন কেন্দ্রে যেতে হলে বন দফতরকে অতিরিক্ত কর দিতে হয় পর্যটকদের


বনে মধ্যেকার এই পর্যটন কেন্দ্রে রাত্রিযাপনের কোনও ব্যবস্থা নেইএখানে সমুদ্র খুব কাছে 


দোবাঁকি ক্যাম্প


(৩) দোবাঁকি ক্যাম্পঃ পিরখালি জঙ্গলের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে এই পর্যটন কেন্দ্রটিচারদিন খাঁড়িতে ঘেরাবাঘ অধ্যুষিত জঙ্গলসুধন্যখালি থেকে আড়াই ঘন্টার পথসজলেখালি থেকে তিন ঘন্টার জল পথ

ওয়াচ টাওয়ার
এখানেও মিষ্টিজলের পুকুর রয়েছেসেখানে বন্য জীবজন্তুরা জল খেতে আসেপর্যটকদের দেখানোর জন্য ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করে রেখেছে।  

ভাসমান সেতু।
এখানে গেলেই কোনও না কোনও প্রাণী চোখে পড়বেইশীতের সময় নদীর চরে কুমিরকে শুয়ে থাকতে দেওয়া যায়জঙ্গলের উপর দিয়ে কনক্রিটের ১৫০ মিটার লম্বা ভাসমান হাঁটা সেতু বানানো হয়েছে। 


বন এবং জন্তুদের দেখার সম্ভাবনা রয়েছে বাঘ, হরিণ, শুয়োর, পাখি দেখা যায়।  উম্মুক্ত পরিবেশে বেড়ানোর  ভালো জায়গাপাখির গান শোনা যাবে


Sunday, 15 January 2017

সুধন্যখালি


(২) সুধন্যখালিঃ ছোট ছোট ৭ টি দ্বীপ ঘিরে পিরখালিএটাই সুধন্যখালি পর্যটন কেন্দ্রএখানে বাঘ রয়েছে ২০ টিসজনেখালি থেকে জলযানে মাত্র কুড়ি মিনিটের জল পথ। 


এখানে ওয়াচ-টাওয়ার ছাড়াও বসে আড্ডামারার ভালো জায়গাআছে ম্যানগ্রোভ পার্কবসার জায়গাবাঘের ভয়ে এলাকাটি লোহার জাল দিয়ে ঘেরাগা ছমছম পরিবেশবাঁদরের দাপাদাপিএখানে বাঘের খাওয়ার জন্য মিষ্টি জলের পুকুর রয়েছেবাঘ, হরিণ, বন্য শুয়োর, গোসাপ (তাড়খেল) জল খেতে আসে।এখানে আসলে বাঘ দেখার সম্ভাবনা বেশি। 



কালনাগিনী আর সব্জ সাপ (ব্যাম্বপিট-ভাইপার) সাপ দেখা যায়প্রচুর রঙ-বেরঙের পাখির মেলাগ্রীষ্মকালে তো গান শোনায় (ওই সময় পাখিদের প্রজনন সময়মিলনের জন্য পুরুষ দের কাছে পাওয়ার জন্য স্ত্রী পাখিরা নানা সুরে ডাকাডাকি করে, গান গেয়ে খুশি করে)


বন কর্মীরাও থাকে জালের ঘেরার মধ্যে এখানে  প্রায় বাঘের দেখা মেলেচরে কুমিরনদী পথে বেড়ানোর সময় বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদেখা যায়

সজনেখালি


(১) সজনেখালিঃ বনে প্রবেশের প্রথমেই যেতে হয় সজনেখালি পর্যটন কেন্দ্রটিতেএখানে বন দফতরের একটি স্টেশন অফিস রয়েছেপর্যটকদের বনে ঢোকার অনুমতি পত্র দেখাতে হয় এবং বাধ্যতামূলক ভাবে গাইড নিতে হয়



ম্যানগ্রোভ ইন্টারপ্রিটেশেন সেন্টার (মিউজিয়াম), ওয়াচ টাওয়ার, কুমির পুকুর, কচ্ছপ পুকুর, বনবিবির মন্দির দেখার জায়গা আছেরয়েছে সরকারি ট্যুরিস্ট লজ




পাখি, বাঘ, বাঁদর এবং হরিণ, গোসাপ (তাড়খেল) চোখে পড়েআগে এখানে শীত প্রধান সাইবেরিয়া, তিব্বত থেকে পরিযায়ী পাখিরা এসে ভিড় করতো। 


বিপরীতে, পাখিরালয়, রাঙাবেলিয়া গ্রাম। এখানের ইংরাজ সাহের হতার ড্যানিয়েল হ্যামিলটন শাসন করেছেন। গোসাবার বাজারের পাশে রয়েছে হ্যামিলটন ও বেকন বাংলো। হ্যামিলটনের আমল থেকে প্রতি শনিবার গ্রাম্যহাট বসে আসছে। আজও অসে। বিভিন্ন দ্বীপ থেকে মানুষের সমাগম হয়



সুন্দরবনে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেখানে (২৯-৩০ ডিসেম্বর ১৯৩২) কাটিয়ে ছিলেনপর্যটকদের বেড়ানোর উপযুক্ত জায়গাঐতিহাসিক গ্রাম্যহাট আজও বসে